পুলিশের পলাতক ও চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে। এই চিঠি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নাম ও পরিচয়পত্র সংযুক্তসহ অধিদপ্তরে এলেই তা কার্যকর হবে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ারবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাসপোর্ট বাতিল হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুনুর অর রশিদ, অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার অন্যতম। অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসব কর্মকর্তা গা ঢাকা দেওয়া কর্মকর্তারা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, এ কারণে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে পলাতক কর্মকর্তাদের নাম ও পরিচয়পত্র চাওয়া হয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি হারুন অর রশীদ। এখনও চাকরিচ্যুত নন পুলিশ সদর দপ্তরের এই তালিকায় তাকে এক নম্বরে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে-পরে সংঘটিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায়ও তিনি শীর্ষে। তবে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া এই কর্মকর্তা তার অফিসিয়াল পাসপোর্ট ছেড়ে সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। তার এই পাসপোর্টও বাতিল হয়ে যাবে বলে সূত্র বলছে। সূত্র আরও জানায়, আলোচিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলায় তার নাম পাওয়া গেছে। সর্বশেষ এই কর্মকর্তা ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে বেশি সমালোচিত হন। পুলিশ সদস্যদের পলাতক তালিকায় আলোচিত পাঁচ জন অতিরিক্ত ডিআইজি। তাদেরও কর্মস্থলে অনুপস্থিত হিসেবে দেখানো হয়েছে। পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সারিতে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। ছাত্র-জনতাসহ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৭টি। ৫ আগস্টের পর তাকেও আর পাওয়া যায়নি। কথিত রয়েছে, এই কর্মকর্তাও ভারতে পালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার নুরুন্নবী, অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম মেহেদী হাসান ও অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জিত কুমার রায়। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে-পরে সংঘটিত হতাহতের ঘটনায় একাধিক মামলা করা হয়েছে। অসুস্থতার আবেদন করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি উত্তম কুমার পাল, এসপি আবু মারুফ হোসেন, শাহ নুর আলম পাটোয়ারী, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশানুল হক সৈকত, এএসপি মফিজুর রহমান পলাশ, এএসপি আরিফুজ্জামান, এএসপি আল ইমরান হোসেন, এএসপি ইফতেখার মাহমুদ। চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বহুল আলোচিত আরেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া এএসপি জন রানা ৫ আগস্টের আগেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তিনি ২ আগস্ট পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। রংপুর ডিআইজি কার্যালয় থেকে সেটি পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে ২৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। পলাতক ১৮৭ জনের এই তালিকায় পাঁচ জন পরিদর্শকও আছেন। এ ছাড়া ১৪ জন এসআই, ৯ জন এএসআই, ৭ জন নায়েক এবং ১৩২ জন কনস্টেবল রয়েছেন। এই কনস্টেবলদের মধ্যে দুজন নারী সদস্যও আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব কর্মকর্তা পালিয়ে আছেন, তাদের গ্রেফতারে সারা দেশে পুলিশের অনেক টিম কাজ করছে। যেকোনও মূল্যেই তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাদের তো ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। তারা কোন দেশে পালিয়েছেন, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য নেই। অনেকেই পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন। আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বাতিল হচ্ছে পলাতক যেসব পুলিশ কর্মকর্তার অফিসিয়াল পাসপোর্ট
- আপলোড সময় : ২৮-১০-২০২৪ ১২:২৬:১৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-১০-২০২৪ ১২:২৬:১৭ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ